নন্দীগ্রাম। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক উত্থান এই নন্দীগ্রামের মাটি থেকেই শুরু হয়েছিল। নন্দীগ্রামের সঙ্গে বিগত সময়ের রাজনীতিতে যে দুটো নাম জড়িয়ে আছে - সেই মমতা ব্যানার্জি এবং শুভেন্দু অধিকারী - তাঁরা এতদিন এক দলে থাকলেও এবারের নির্বাচনে দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ।
২০০৯ সালের ১৪ই মার্চ নন্দীগ্রাম থেকেই মমতা ব্যানার্জি তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশের তোড়জোড় শুরু করেছিলেন। সেই ইস্তেহারে ছিল একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি। নন্দীগ্রামের মানুষ দুচোখ ভরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল তারপর। কিন্তু প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবের ফারাক এই ১২ বছরে দেখেছে নন্দীগ্রামের মানুষ। একনজরে দেখে নেওয়া যাক প্রতিশ্রুতি আর বাস্তব - এই মুহূর্তে ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রাম।
১. জেলিংহ্যাম চরে রেলের কারখানা- ২০১২ সালের ১৪ মার্চ এই কারখানার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত মালগাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি হওয়ার কথা। সে সবের কিছুই হয়নি।
২. শামুকখালিতে দ্বিতীয় বন্দর - না, সে কাজও এগোয়নি।
৩. হলদিয়াতে রেল কোচ কারখানা - না, প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়নি।
৪. নন্দীগ্রাম স্টেডিয়াম - না, হয়নি।
৫. ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক - কথা ছিল রেল, সেইল আর রাজ্য সরকার মিলে করবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। সে কাজও এক ইঞ্চি এগোয়নি।
৬. কিষাণ মান্ডি - ২০১২ সালের ১৪ই মার্চ নন্দীগ্রামের সীতানন্দ কলেজ মাঠে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ৩৪১ টি কিষাণ মান্ডি হবে রাজ্য জুড়ে। নন্দীগ্রামেই প্রথম কিষাণ মান্ডির শিলান্যাস করেন তিনি। সেটির হালও বেহাল। কৃষকদের থেকে ফসল কেনা অনিয়মিত।
৭. পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা - মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল বাইরের রাজ্যে কাজ করা নন্দীগ্রামের বাসিন্দাদের ঘরে ফিরিয়ে আনবেন। বর্তমান নন্দীগ্রামের শুধুমাত্র দুটি ব্লক থেকে ২৫ হাজার যুবক বাইরের রাজ্যে কাজ করেন।
৮. নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্র- নন্দীগ্রামের মানুষকে আর ভেলোর, চেন্নাই যেতে হবে না, এই নন্দীগ্রামেই সেই পরিষেবা পাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই হাসপাতালের পরিকাঠামো আজ বেহাল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের রেফার করা হয় বলে অভিযোগ। নন্দীগ্রামে প্রচার চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী আঘাত পেলে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করাননি বলেও কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা।
৯. মৃতদের পরিবার – নন্দীগ্রামে ১৪ মার্চের ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়। পরবর্তীকালে আর কোনো সরকারী সাহায্য তাঁরা পাননি বলে অভিযোগ। তৃণমূল সরকার পরিবারের লোকজনকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ৫ জন গ্রুপ ডি-র পরীক্ষা দিলেও আজও সেই নিয়োগ হয়নি বলে অভিযোগ।
১০. চিটফান্ডে প্রতারিত নন্দীগ্রাম – তথ্য অনুসারে নন্দীগ্রামে একচেটিয়া ব্যবসা করেছে সারদা চিটফান্ড। অভিযোগ রীতিমত তৃণমূল নেতৃত্বের পৃষ্ঠপোষকতায় তা হয়েছে। সর্বস্ব খুইয়েছেন হাজার হাজার নন্দীগ্রামবাসী। একজনও টাকা ফেরত পাননি। সেই নিয়ে ক্ষোভ একাংশের মধ্যে।
নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শুভেন্দু অধিকারী ও মমতা ব্যানার্জীর ছায়াসঙ্গী মেঘনাদ পালের কথায়- “কিছুই হয়নি। কারখানা, শিল্প কিছু না। বরং নন্দীগ্রামে মৃত ১৪ জনের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য বামফ্রন্ট সরকার করেছিল। গত ১০ বছরে মৃত কিংবা আহতদের পরিবার একটা সরকারি সহায়তা পায়নি”। প্রসঙ্গত, এই মেঘনাদ পাল চার মাস আগেও তৃণমূল সমর্থক ছিলেন। শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপি যাওয়ার সাথে সাথে ইনিও দল পরিবর্তন করে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন